বুধবার ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ

শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫
79 ভিউ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ

কক্সবাংলা ডটকম(২৯ আগস্ট) :: বাংলাদেশ আজ এক অস্থির অথচ প্রত্যাশার সময় অতিক্রম করছে। গণঅভ্যুত্থান, দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অচলাবস্থা, সরকার পতনের নাটকীয় মোড় এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশ আবারও নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা, গণতন্ত্রের পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকনির্দেশক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ যে অশান্ত ও রূপান্তরমুখী রাজনীতির মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তার প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে দৃশ্যমান। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে ঘিরে যে উত্তেজনা, আশঙ্কা এবং প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, তা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গেই তুলনীয়। আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ প্রচেটায় শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি শাসনের অবসান হয়। সে সময় একটি অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসা ছিল মূলত জনগণের দাবির ফলাফল।

এ পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি যে ভাষায় জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন এবং নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা দেশে রাজনৈতিক আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। সেনাপ্রধান স্পষ্ট করে বলেছেন, দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে। এটি সাধারণ নাগরিকদের জন্য এক ধরনের স্বস্তি তৈরি করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি আবারও ক্ষমতায় ফেরার সুযোগ এনে দিয়েছে।

এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ এক ধরনের আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে সময় কাটাচ্ছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে দলটির ভেতরে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অগণতান্ত্রিক চর্চা এবং প্রশাসনকেন্দ্রিক নির্ভরতা তৈরি হয়েছিল, তা তাদের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। এখন দলটি সংগঠন পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে, তবে তাদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো- জনগণের আস্থা ফিরে পাওয়া। আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব কতটা বিশ্বাসযোগ্য বার্তা দিতে পারবে, তা আগামী নির্বাচনে তাদের অবস্থান নির্ধারণ করবে। অন্যদিকে বিএনপি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও নেতৃত্ব সংকট কাটিয়ে আবারও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে দলটি এখনো সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নেতৃত্বের অনিশ্চয়তায় ভুগছে।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতি, তারেক রহমানের অবস্থান এবং সময় যে গণজোয়ার তারা পেয়েছিল, তা নির্বাচনে রূপান্তর করতে পারলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আস্থা তৈরি এবং জনগণের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ রক্ষা করা। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, বাম গণতান্ত্রিক জোট কিংবা আঞ্চলিক দলগুলোও নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে চাইবে। জামায়াত সাম্প্রতিক সময়ে সাংগঠনিকভাবে কিছুটা সক্রিয় হলেও তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। জাতীয় পার্টি আবারও ক্ষমতার সঙ্গে আপস করার কৌশল খুঁজছে। বাম দলগুলো নানা আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রভাব সীমিত থাকবে। তবে একাধিক ছোট দল জোট গঠন বা সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তি তৈরি হচ্ছে। এই প্রজন্ম অতীতের দলীয় বিভাজনের বাইরে গিয়ে পরিবর্তনের দাবি তোলছে। তারা চায় একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি। নির্বাচনে তরুণদের ভোট এবং অংশগ্রহণ যেকোনো দলের জন্য গেম-চেঞ্জার হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারও তাই তরুণ প্রজন্মকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও নিবিড় দৃষ্টি রাখছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। ভারত তার কৌশলগত কারণে স্থিতিশীল বাংলাদেশ চায়, আর চীন অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার দিকটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই আগ্রহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে, কারণ নির্বাচন যদি বিতর্কিত হয় তবে তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হারানোর ঝুঁকি তৈরি করবে।

নির্বাচনের পথ যত এগিয়ে আসছে, ততই চ্যালেঞ্জও প্রকট হয়ে উঠছে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, প্রশাসনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এখন প্রধান কাজ। নির্বাচনকালীন সময়ে সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আবারও হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এ কারণে সেনাপ্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা বিশাল। তারা বিশ্বাস করতে চাইছে, এবার আর কোনোভাবে প্রহসনের নির্বাচন হবে না। অন্যদিকে অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতাও নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।

মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং সেক্টরের অস্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগে মন্দাভাব দেশের অর্থনীতিকে সংকটময় অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানো সম্ভব নয়। বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ সবাই আশা করছে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি বৈধ ও গ্রহণযোগ্য সরকার গঠিত হলে অর্থনীতিতে আস্থা ফিরবে এবং উন্নয়নের গতি পুনরুদ্ধার হবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে- কে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি একটি বড় অংশের বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। আবার বিএনপি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে। তবে জনগণ আর শুধু দলীয় প্রতিশ্রুতি শুনতে চায় না, তারা কার্যকর নীতি, বাস্তবসম্মত সমাধান এবং জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা দেখতে চায়।

এ কারণে আসন্ন নির্বাচন শুধু দলীয় ক্ষমতার পালাবদলের প্রশ্ন নয়, বরং গণতন্ত্রকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার একটি সুযোগও বটে। এবারের নির্বাচনে সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নির্ধারক। সরকার যদি প্রমাণ করতে পারে যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের দূরে রেখে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতায় কাজ করার সুযোগ দিয়েছে, তবে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। যদি ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয় বা কোনো একটি পক্ষকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, তবে তা আবারও রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্ম দিতে পারে। জনগণের আশা ও আস্থার ভারসাম্য তাই এখন মূলত তাদের হাতেই।

সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। অতীতের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিতর্ক জনগণের মনে এখনো তাজা। তারা আর প্রহসনমূলক নির্বাচন দেখতে চায় না। তাই এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে নতুন ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর যে সুযোগ এসেছে, সেটি কাজে লাগানো না গেলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আবারও অনিশ্চয়তায় ডুবে যাবে। তবে যদি নির্বাচন সত্যিকার অর্থে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হয়, তবে তা কেবল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও নতুন এক আস্থার সূচনা করবে।

বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের জন্য বহুবার লড়াই করেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণআন্দোলন কিংবা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান- সবকিছুই প্রমাণ করে যে জনগণ কখনোই তাদের অধিকার থেকে সরে যায় না। এবারও সেই জনগণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা চায় একটি এমন নির্বাচন, যা তাদের কণ্ঠকে প্রতিফলিত করবে, যা হবে নতুন যাত্রার সূচনা। বাংলাদেশের রাজনীতির এই মুহূর্তে সেটিই সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা, আর সেটিই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের পথচলা।

লেখক-রাজু আলীম : কবি, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তি

79 ভিউ

Posted ১:৫০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

SunMonTueWedThuFriSat
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031 

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com